শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

বাংলালিংক দিচ্ছে ১০ হাজার টাকার জেডটিই ভি৮০৭ মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায়!

banglalink priyojon
বাংলালিংক তাদের “প্রিয়জন” সদস্যদের জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জেডটিই স্মার্টফোন মাত্র সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় কেনার সুযোগ দিয়েছে। প্রিয়জন প্রোগ্রামের নতুন এই অফারটি ঘোষণার পর থেকেই সবার নজর কেড়েছে। বিশেষ করে যারা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনবো কিনবো করছেন, তাদের প্রায় সবাই এই ফোন নিয়ে উৎসাহী। কিন্তু কেবল দাম কমানো হয়েছে বলেই কি ফোনটি কেনা ঠিক হবে? প্রথমেই চলুন দেখে নেয়া যাক কী আছে এই ফোনটিতে।

জেডটিই ভি৮০৭ স্পেকস

জেডটিই’র এই ফোনটিতে রয়েছে ৪ ইঞ্চি ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ৪৮০ বাই ৮০০ পিক্সেল। টিএফটি প্রযুক্তির এই ডিসপ্লেতে পিক্সেল পার ইঞ্চি (পিপিআই) হচ্ছে ২৩৩। এতে রয়েছে ১ গিগাহার্জ করটেক্স এ৯ ডুয়াল কোর প্রসেসর। গেমিং ও অন্যান্য গ্রাফিক্স রেন্ডারিং-এর জন্য রয়েছে পাওয়ারভিআর এসজিএক্স৫৩১ইউ। তবে এর অন্যতম অসুবিধাজনক দিক হচ্ছে এর র‌্যাম। এতে দেয়া হয়েছে ৫১২ মেগাবাইট র‌্যাম যা ফোনের পারফরম্যান্সে খুব বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও ফোনটিতে রয়েছে ৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ যা এসডি কার্ডের মাধ্যমে বাড়ানো যায়।
ফোনটিতে রয়েছে ৩জি সুবিধা, যা দেশের ৩জি নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা গ্রাহকদের জন্য নিঃসন্দেহে সুখবর। কিন্তু এর ১৬০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৩জি নেটওয়ার্কে খুব দ্রুতই নিঃস্ব হয়ে যেতে পারে, যেক্ষেত্রে আপনাকে সবসময়ই পাওয়ার সোর্সের ধারেকাছে থাকতে হবে। এছাড়া ফোনটিতে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৩.০, জিপিএস, এক্সেলেরোমিটার ও প্রক্সিমিটি সেন্সর রয়েছে।
ফোনটির ক্যামেরা আপনাকে বেশ ভালোভাবেই হতাশ করবে। কেননা, এর পেছনে রয়েছে মাত্র ৩.১৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। আরও দুঃসংবাদ হলো, এর সামনে কোনো ক্যামেরা নেই। ফলে স্কাইপে ভিডিও কল করা কিংবা সেলফি তোলা এই ফোনে অন্তত সম্ভব হবে না।
এছাড়া জেডটিই’র এই ফোনটিতে চলছে অ্যান্ড্রয়েড ৪.১  জেলি বিন। অফিসিয়ালি এতে অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাট আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে কাস্টম রমের মাধ্যমে কিটক্যাট ইন্সটল করা যেতে পারে যেক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি হারাতে হবে ক্রেতাকে।

কেনা কি ঠিক হবে এই ফোন?

ZTE V807
১০ হাজার টাকার আশেপাশে দামে এই ফোন কেনার কথা ভুলেও চিন্তা করা যায় না। কিন্তু যেহেতু বাংলালিংক তাদের প্রিয়জন গ্রাহকদের সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার মধ্যে ফোনটি কেনার সুযোগ করে দিয়েছে, সেহেতু ফোনটি আসলেই কেনা উচিৎ কি না তা ভাবার অবকাশ রয়েছে।
প্রথমেই বলে নেয়া উচিৎ, ফোনটি দিয়ে আপনি বেসিক অপারেশন করতে পারলেও স্মার্টফোনের স্বাদ তো পাবেনই না, বরং শিগগিরই এটি আপনার সারাক্ষণের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এর জন্য কেবল ৫১২ মেগাবাইট র‌্যাম ও ‌১ গিগাহার্জ প্রসেসরই দায়ী নয়, বরং আপনি যেসব অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করবেন, সেগুলোর বেশিরভাগই বেশি প্রসেসর বা র‌্যাম ব্যবহার করে থাকে (যেমন ফেসবুক মেসেঞ্জার), আর তাই আপনা-আপনিই পুরনো হার্ডওয়্যারে পারফরম্যান্স খুবই খারাপ হয়। এই দোষ ফোনের নয়, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম, যার শিকার কম হার্ডওয়্যারের প্রায় সব ফোন।
ফোনটিতে এমনিও আপনি খুব বেশি অ্যাপ ইন্সটল করতে পারবেন না। কেননা, সেক্ষেত্রে অ্যাপের পাশাপাশি ফোনের ইউজার ইন্টারফেসও এতোটাই ধীরগতির হয়ে পড়বে যে ফোন আছড়ে ভাঙার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তেমন অ্যাপ ইন্সটল না করলেও একটা সময় পর সেটের গতি ধীর হতে শুরু করবে যা লো থেকে হাই-এন্ড সব ধরনের অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই লক্ষ্য করা যায়। তবে লো-এন্ড ফোনের হার্ডওয়্যার দুর্বল থাকে বলে এগুলোতে সমস্যাটা বেশি মাত্রায় ধরা পড়ে।
গেমপ্রেমীরা হয়তো ফ্ল্যাপি বার্ড কিংবা টেম্পল রানের মতো গেম খেলতে পারবেন, কিন্তু অনেক বেশি গেম ইন্সটল করতে পারবেন না কিংবা এইচডি গেম সুবিধাজনক পারফরম্যান্সে খেলতে পারবেন না।
সবমিলিয়ে বলা যায়, তুলনামূলক কম দাম হিসেবে ফোনটি ঠিক আছে। আপনার জরুরি ভিত্তিতে একটি ফোন দরকার কেবল কথা বলার জন্য ও মেসেজিং/ইমেইল এর জন্য, সেক্ষেত্রেও ফোনটি ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যদি অনেকদিন ধরে একটি অ্যান্ড্রয়েডের স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে এটি মোটেই আপনার জন্য নয়। কেননা, এটি আপনাকে সন্তুষ্ট তো করবেই না, বরং উল্টো অ্যান্ড্রয়েডের উপরেই মন বিষিয়ে তুলবে।
ফলে, সিদ্ধান্তটা নিতে হবে আপনার চাহিদার উপর ভিত্তি করে। যদি যে কোনো মূল্যে আপনার একটি ফোন দরকার হয়, তাহলে ফিচার ফোনের বদলে এই ফোনটি কিনতে পারেন। দাম অনুপাতে জেডটিই ভি৮০৭-কে খারাপ বলা যাবে না কোনোভাবেই। কেবল মনে রাখা দরকার প্রত্যাশাও হতে হবে ফোনের দাম ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ীই।বিশেষ করে যদি যদি “অ্যান্ড্রয়েড ফোন’ দরকার হয়, তাহলে ঠিক কী কারণে অ্যান্ড্রয়েড প্রয়োজন সেটা খুঁজে বের করুন এবং সেই চাহিদা জেডটিই’র এই ফোনে পূরণ হবে কি না তা যাচাই করে নিন। আপনি অবশ্যই ছবি তোলায় আগ্রহী হয়ে এই ফোনটি কিনতে চাইবেন না কিংবা হেভি গেমার হয়ে ফোনটিতে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারবেন না।
আর হ্যাঁ, বাড়তি সুবিধা হিসেবে প্রত্যেক ক্রেতা এই ফোনের সঙ্গে পাবেন ১ গিগাবাইট ফ্রি ইন্টারনেট ডেটা।
 আপনার কী মতামত? যত কম মূল্যেই হোক, ফোনটি কেনা কি উচিৎ হবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন